রায়ারসনের মূর্তি হার্বারে বিসর্জনের পর, এখন নামকরণ করেছে ‘এক্স ইউনিভার্সিটি’

টরন্টো, জুন ৭: কানাডায় আবাসিক স্কুল প্রচলনের অন্যতম জনক ইগারটন রায়ারসনের মূর্তি গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ডাউনটাউনস্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের স্মৃতিস্তম্ভ থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে টেনে নামানোর পর অবশেষে সেটিকে টরন্টোর হার্বার জলে বিসর্জন করেছে।

এক্ষেত্রে গত ২৭ মে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ক্যামলুপসের সাবেক ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের ভূগর্ভ থেকে রাডার পরীক্ষণের মাধ্যমে ২১৫টি শিশুর দেহাবশেষ প্রাপ্তির সংবাদ আদিবাসী ফার্স্ট নেশন্স থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তেই এই মূর্তি উৎপাটনের বিষয়টি দানা বাঁধতে শুরু করে।

তাতে আজ সোমবার অতি প্রত্যুষে এক বিবৃতিতে ওই মূর্তি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ লাখেমি বলেছেন, ‘আমরা তা সংরক্ষণ কিংবা প্রতিস্থাপন করবো না।’ এ বিষয়ে একটি টাস্ক ফোর্সকে সার্বিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যেখানে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, ইগারটন রায়ারসনের অবদান বিবেচনা এবং ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে তাকে স্মরণসম্পর্কিত বিষয়াবলী উল্লেখযোগ্য। আমি আমাদের কমিউনিটিকে তাদের ওই ক্রিয়াকর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তাদের কাজে কথপোকথন, বিতর্ক ও পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে হলেও সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তার মতে, ১,০০০ মতো মানুষ অপরাহ্নে কুইন্স পার্কে এক বিক্ষোভে অংশ নেয়, যা গুল্ড স্ট্রিটে এসে শেষ হয়। সেখানে সব মানুষ চলে যাবার এক ঘন্টা পর একটি ট্রাক গুল্ড স্ট্রিটে এসে ইগারটন রায়ারসনের মূর্তিটি টেনে নামায়। তবে আমরা আশ্বস্থ যে ওই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।’

তবু একজন ক্রি ও যার পিতামহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে জীবন কাটিয়েছেন, তিনি মূর্তিটি টেনে নামানোর পর সেখানে উপস্থিত হলে জানান, ‘এখন জাতির জন্য শোক মোচন শুরু হয়েছে। ভাল হয়েছে মূর্তিটি অপসারিত হয়েছে, এখন আমরা ১৮ শতকের রেসিডেন্সিয়াল স্কুল সম্পর্কে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে পারবো।’

একইভাবে মেটিস বংশোদ্ভূত সামান্থা নামের এক বিক্ষোভ সংগঠক এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘রায়ারসন ছিলেন রেসিডেন্সিয়াল স্কুল প্রচলনের জনক, যিনি কৃষ্ণাঙ্গ ও আদিবাসী শিশুদের জন্য পৃথক স্কুল প্রবর্তন করেন, বিশেষ করে কানাডায় ইন্ডিয়ানদের জন্য রেসিডেন্সিয়াল স্কুল চালু করে সাংস্কৃতিক গণহত্যা ও আদিবাসীদের সঙ্গে অপরাপর বিষয়ের সূত্রপাত ঘটান। আর মূর্তির প্রশ্নে আমি মনে করি তা অপসারণ হওয়া দরকার, কেননা তা নিষ্পেষন ও সহিংসতার প্রতীক এবং জাতিসত্তার বিবেচনায় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার মতো অনেক কিছুই সম্পৃক্ত, তাই তার উৎপাটন হওয়া প্রয়োজন।’

ইতিমধ্যে ক্যামলুপসে ২১৫টি শিশুর দেহাবশেষ প্রাপ্তির পর বিশ্ববিদ্যালয়টির আদিবাসী শিক্ষার্থীরা সকল সতীর্থদের পাশাপাশি অ্যালামনাইদের রায়ারসন নামটি ইমেইল ও রিজ্যুমি বিষয়ক পত্রালাপে ব্যবহার না করে বরং ‘এক্স ইউনিভার্সিটি’ লেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

Photos by Muhammad Ali Bukhari