বাংলাদেশের পরম বন্ধু সাইমন ড্রিংয়ের প্রয়াণ

ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং বাংলাদেশের একুশে টেলিভিশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও যমুনা টেলিভিশনের উপদেষ্টা সাইমন ড্রিংয়ের প্রয়ান ঘটেছে। বিলম্বে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে, গত শুক্রবার তিনি রোমানিয়ার একটি হাসপাতালে পাকস্থলীর অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতিকালীন হঠাৎ হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।

তিনি ষাট, সত্তর ও আশির দশকে ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার রণক্ষেত্র, বিশেষত ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরান, নাইজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, উগান্ডা, ইরিত্রিয়া, সাইপ্রাস, ইসরাইল, ব্রাজিল, ক্রোশিয়া, বসনিয়া ও জর্জিয়ার যুদ্ধের ঘটনা প্রবাহসহ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনাবলী তার প্রতিবেদনে একাগ্র চিত্তে তুলে ধরেছেন। এতে ২৭ বছরের যুবক হিসেবে রাজধানী ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানকালীন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে যে গণহত্যাটি সংঘটিত হয়, তা হোটেলের লবি, রান্নাঘর ও ছাদে গিয়ে ধারণ করেছেন।

সে সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৭ মার্চ কার্ফ্যু শিথিল হলে টানা ৩২ ঘন্টায় একটি বেকারীর গাড়ীতে করে ঢাকার নানা প্রান্তে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার তান্ডবলীলা সংবাদ আকারে ধারণ করেন, যা এখনও মর্মন্তুদ চিত্র হিসেবে বিধৃত। ড্রিংয়ের নিজস্ব ভাষ্যে সেই ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর মর্মবিদারী বর্ণনা চিত্রটি হচ্ছে: ‘আমি দেখেছি ছাত্রাবাসের ভেতরে ও বাইরে গুলিতে নিহত ছাত্রদের মরদেহ পড়ে রয়েছে; রাস্তায় পড়ে আছে গুলিতে বক্ষবিদীর্ন রক্তাক্ত রিকশাচালকদের মরদেহ; রাস্তা ব্যারিকেড করে রাখা পুরো এলাকা জুড়ে অগ্নিদ্বগ্ধ পরিবারসহ তাদের বাড়ী-ঘর এবং মাটিতে মিশে যাওয়া ভস্মীভূত বাজার।’

এরপর সংগোপনে ড্রিং সেনাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্লেনে করে ব্যাংকক পালিয়ে যান, সেখান থেকে তার প্রেরিত ‘ট্যাঙ্কস ক্রাস রিভল্ড ইন পাকিস্তান’ অর্থাৎ ‘পাকিস্তানে ট্যাংকের হানায় বিদ্রোহ দমন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ ডেইলি ট্রেলিগ্রাফে প্রকাশ পায়।

১৯৯৭ সালে ড্রিং বাংলাদেশে এসে যৌথ অংশীদারিত্বে প্রথম বেসরকারীভাবে লাইসেন্সকৃত ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত টেরিস্টেরিয়াল/স্যাটালাইট টিভি, একুশে টেলিভিশন চালু করেন।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ফিওনা ও দুই সন্তান রেখে গেছেন। তথাপি অনেকের হৃদয়ে তার কর্মগাথা বাংলাদেশের একজন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Pic of Simon Dring from Alchetron at: https://alchetron.com/Simon-Dring