ভারতের বিষাদগ্রস্থ করোনা সংকট সবার

ভাইরাল চিত্রে দৃশ্যমান ভারতীয় এক নারী তার মৃত্যুমুখী স্বামীকে বাঁচাতে নিষ্ফল চেষ্টা করছে।

টরন্টো, এপ্রিল ২৮: ভারত যখন তার করোনা মহামারি মোকাবেলায় নিয়োজিত, তখন প্রতিনিয়ত সেখানকার চিত্রগুলো হয়ে উঠছে হৃদয়বিদারক। এই সংকট মোকাবেলার চিত্র কেবল ভারতের একার নয়, বরং সবার। সে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথানের ভাষ্যটি প্রণিধানযোগ্য, ‘এই জীবাণু কোনো সীমানা মানে না, না জাতীয়তা, বয়স, লিঙ্গ কিংবা ধর্ম। এখন দুঃখজনকভাবে ভারতে যা হচ্ছে, তার সবটাই অন্য সব দেশে বিরাজমান।’

নিঃসন্দেহে এই মহামারি এই বিশ্বকে একান্নবর্তী করে তুলে ধরেছে, কারণ একটি দেশে ব্যাপক সংক্রমণ দেখা দিলে তা অন্য সব দেশে বিস্তৃত হবার সম্ভাবনাই প্রবল। ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা, একাধিক পরীক্ষা ও অন্তরীন থাকার ব্যবস্থা আরোপিত হলেও সংক্রমণের প্রার্দুভাব থেমে থাকে না। উদাহরনস্বরূপ, ব্যাপক সংক্রমণের দেশ থেকে আসা একজন ভ্রমনকারী, তার সঙ্গে জীবাণু বয়ে আনার সম্ভাবনাটাই বেশি।

অধিকন্তু ভারতে সংক্রমণমাত্রা বৃদ্ধি পাবার অন্যতম কারণটি হচ্ছে ভেরিয়্যান্টের প্রভাব। বি.১.৬১৭ নামের এক ভেরিয়্যান্ট ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ তাকে অতিমাত্রায় প্রানঘাতী ‘ডাবল ভেরিয়্যান্ট’ বলে অভিহিত করেছেন, কারণ করোনা জীবাণুর শলাকায় দ্বিমাত্রিক রূপান্তরটি ঘটেছে। অনুরূপভাবে একটি দেশে অধিকমাত্রায় করোনা জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে, তাতে জীবাণুর রূপান্তর হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়, বরং নতুন ভেরিয়্যান্টই সৃষ্টি করবে।

সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিধিনিষেধ আরোপিত হলেও টিকাকরণের বিষয়টি অত্যাবশ্যক। ভারতে সেটা ধীরে ধীরে হচ্ছে এবং এ পর্যন্ত জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরও কম মানুষ প্রতিষেধকের প্রথম ডোজটি নিয়েছেন এবং মাত্র ২ শতাংশ মানুষ পুরোপুরি টিকা গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন, যদিও সেখানে ২,৬০০ বিশেষজ্ঞ একাগ্রতায় কাজ করে চলেছেন। আর সেটা সম্ভব হয়েছে যেহেতু সেখানে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারী সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া রয়েছে।

ভারতে মার্চে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে এবং তাতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বৃহৎ উৎপাদন রফতানি চালানটি বন্ধ করে দেয়া হয়, যা বাস্তবিকই জাতিসংঘের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য গৃহীত কোভেক্স পরিকল্পনায় টিকা সরবরাহকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।

স্বাভাবিকভাবেই তাতে অনেক দেশে টিকাকরণ কর্মসূচী ব্যাহত হবে। কেননা তাতে ভিন্নার্থে ভারতে উৎপাদিত টিকা অভ্যন্তরীন প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হবে, যদিও দেশটি জোরেশোরে উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। সেই বিবেচনায় ভারতের সঙ্গীন অবস্থাকে বিজ্ঞানীরা প্রধান গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।

তাই ওই প্রেক্ষাপটে দেশে দেশে করোনা মহামারি বিলোপ বা হ্রাসের কোনো সম্ভাবনা নেই। সেজন্য ভারতের বিষাদগ্রস্থতার চিত্রপটে বৈশ্বিভাবে আমরা কেউ নিরাপদ নই, যতক্ষণ না আমরা প্রত্যেকে নিরাপদ হতে পারছি।

PHOTO CAPTION: ভাইরাল চিত্রে দৃশ্যমান ভারতীয় এক নারী তার মৃত্যুমুখী স্বামীকে বাঁচাতে নিষ্ফল চেষ্টা করছে।