কানাডায় করোনা দ্বিতীয় টিকার বিলম্ব কতোটা বিজ্ঞানসম্মত? মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমএনজি নিউজ

টরন্টো, এপ্রিল ৬: সাম্প্রতিক ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের সম্পাদকীয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন মতে দেখা যাচ্ছে, দ্রুত করোনা প্রতিরোধে কানাডায় অধিক সংখ্যক জনগোষ্ঠিকে টিকাদান কর্মসূচীর আওতায় আনতে দ্বিতীয় ডোজটি যেভাবে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে, তা আদৌ বিজ্ঞান সম্মত নয়।

কারণ হিসেবে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, প্রতিরোধ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ফাইজার বায়োএনটেকের রিঅ্যাক্ট-টু স্টাডিতে ২১ দিন পর অনুর্ধ্ব ৬০ বছর বয়সীদের মাঝে ৮০ শতাংশ আইজিজি পজিটিভিটি যেমনটা তৈরি হয়, তেমনটা ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সীদের মাঝে তা তৈরি না হয়ে বরং তৈরি হয় যথাক্রমে মাত্র ৪৯ ও ৩৪ শতাংশ। আর সেই আইজিজি পসিটিভিটি গিয়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৯৩ ও ৮৮ শতাংশ, যদি দ্বিতীয় ডোজের টিকাটি এই বিপদগ্রস্থ বয়সীদের দেয়া হয়।

এছাড়া বলা হয়েছে, ফাইজার কখনোই সর্বোচ্চ কার্যকারিতার বিষয়ে গ্যারান্টি দেয়নি। বয়স্কদের ব্যাপারে উদ্বেগ থেকেই গেছে যতক্ষণ না দ্বিতীয় ডোজটি দেয়া হচ্ছে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয়েছে। ফাইজারের ক্ষেত্রে পাবলিক হেলথ্ ইংল্যান্ডের উপাত্তে দৃশ্যমান যে, উপসর্গজনিত ৮০ বছর বয়সীদের মাঝে প্রথম ডোজে কার্যকারিতা ৫৭ শতাংশ, যা দ্বিতীয় ডোজে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ফাইজার বায়োএনটেকের দ্বিতীয় ডোজের টিকাটি যেন ২১ থেকে ২৮ দিনের মাঝে দেয়া হয়; তবে অবস্থা বুঝে তা সর্বোচ্চ ৬ সপ্তাহের ব্যবধানেও দেয়া যেতে পারে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বেশ কয়েক মাস আগেই বলেছে যে, প্রয়োজনে মানুষ দুই ডোজের মাঝে ৪২ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে। তবু তাদের বক্তব্য, প্রাথমিক সময়সীমাই সকলের মেনে চলা উচিত। অন্যদিকে, ডিউক হিউম্যান ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের চিফ অপারেটিং অফিসার থমাস ডেনি বলেছেন, ফাইজার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম এবং মডার্নার ভ্যাকসিন পারে ৮০ শতাংশ; তবে দ্বিতীয় ডোজ মিলে উভয় ডোজ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিরোধ সৃষ্টিতে সক্ষম।

অন্যদিকে রকোফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেট্টোভিরোলজিস্ট পল বিয়েনিয়াজের দুঃচিন্তাপূর্ণ বক্তব্যটি হচ্ছে, যারা আংশিকভাবে টিকা নিয়েছেন, তারা ভয়ঙ্কর ভেরিয়্যান্টের কাছে বেশিমাত্রায় স্পর্শকাতর। আর সেটা অতিমাত্রায় উদ্বেগের কারণ। তিনি সায়েন্টিফিক আমেরিকানকে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘এই জীবাণু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়াশীল, যেভাবেই সেটা প্রয়োগ করি না কেন। আর সেই প্রশ্নটি একটি দেশের পুরো জনগোষ্ঠির মাঝে একজন ব্যক্তির আংশিক প্রতিরোধেই বিবর্তিত।’

এছাড়া এটা ইঙ্গিতপূর্ণ যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বিলম্বিত করা যেতে পারে, তবে ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে তা কাম্য নয়, কারণ সেগুলোর এমআরএনএ ক্ষয়িষ্ণু হতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশনের দৃষ্টিতে টিকার ডোজ গ্রহণের বিষয়টি পুরোপুরি সুস্পষ্ট এবং তা যথাযথ নির্দেশনামাফিকই হওয়া চাই।

তা হলে প্রশ্ন হচ্ছে, কানাডা সরকার কেন অপরাপর স্বাস্থ্য সংস্থা ও মেডিক্যাল জার্নালের পরামর্শকে উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট সময়সীমায় তা জনগণকে দিচ্ছে না?