বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী

মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমএনজি নিউজ

টরন্টো, মার্চ ২৬: আজ শুক্রবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। স্বাভাবিকভাবেই এ দিনটি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে একটি আবেগ ঘন দিন। একদিকে মহান আত্মত্যাগের স্মৃতি এবং অন্যদিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাবার গৌরবোজ্জ্বল অর্জন। সেজন্য এ বছর বাংলাদেশের সরকার তার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্ম বার্ষিকী পালনের সঙ্গে তা জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করতে যাচ্ছে। ১০ দিন ব্যাপি ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসবে দেশ মেতেছে, যা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে ঘিরেও বটে। এ জন্য আঞ্চলিক প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ চীন ছাড়াও সুদূর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বিশেষ ভিডিও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন।

তবে সব কিছুকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যে জাতির অপরিসীম আত্মত্যাগ, তা কেনোভাবেই বিস্মৃত হবার নয়; বিশ্বের নব প্রজন্মের কাছে তা ইতিহাসের স্বার্থে পঠনীয়। যখন ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে পাকিস্তান ও ভারতের অভ্যুদয় ঘটে, তখন আজকের বাংলাদেশ পাকিস্তানের দুটি অংশের একটি অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে গণ্য ছিল। তারা অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে অপর অংশ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠির কাছে অধিকতর স্বায়ত্বশাসনের দাবী তোলে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বাংলাদেশের মানুষের সে দাবী উপেক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন ও সরকার গঠনের সংখ্যা গরিষ্ঠ গণরায়কে ভূলুন্ঠিত করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে নৃশংস গণহত্যায় মেতে ওঠে।

এতে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে দেশময় স্বাধীনতা যুদ্ধ সূচিত হয়। পাশাপাশি ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ওই স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়। আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরুর মাত্র দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশের বিজয় ঘোষিত হয়।

সেই থেকে ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন বাস্তবিকই প্রশংসনীয়। এখন সেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য বিশ্বে সুবিদিত। আশির দশক থেকেই এই সাফল্যের সোপানটি রচিত। তবু গত ১০ বছরে ডলারের মূল্যমানে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে ৮০ শতাংশ। এমনকী গত বছর  অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দেখিয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মাথাপিছু জিডিপি ভারতের চেয়েও বেশি। গার্মেন্ট রফতানিই এই অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি। তাতে আঞ্চলিক তো বটেই, বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতেও তার পদচারণা জাগরিত। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কমিটিও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণটি জানিয়েছে।

তবু বাংলাদেশের এই অথনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে কর্তৃত্ববাদীতার অভিযোগটি সম্পৃক্ত, যেমনটা ঘটেছে স্বাধীনতার পর তথাকথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে। এখন সমালোচনা হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে গণতন্ত্রের পরিবর্তে একনায়কতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা করছেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দুটি সাধারণ নির্বাচন নিয়েও নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এছাড়া ক্ষমতা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুনীতি, অর্থপাচার ও রাজনৈতিক নিপীড়নসহ ইন্টরনেটে স্বাধীন বক্তব্য প্রকাশে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে বিনা বিচারে আটক ও নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে।

ফলশ্রুতিতে ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য যতখানি ঈর্ষণীয় অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, ততখানি ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য চ্যালেঞ্জতুল্য হয়েছে। গণতন্ত্রের সফল ও সার্থক বিকাশে তা বাস্তবিকই বিবেচ্য। সার্বিক অর্থে, সেজন্য সরকার এবং দেশ-জাতিকে সে বিষয়টি বুঝতে হবে।