আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন বলতে কী বোঝায়?

মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমএনজি নিউজ, টরন্টো

জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপনের সঙ্গে বৈশ্বিকভাবে উন্নত ও অনুন্নত দেশে একটি বিশেষ মাত্রা যুক্ত হয়, যা জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত চারটি পর্যায়ক্রমিক নারী সম্মেলন থেকে উদ্ভূত এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি উল্লেখযোগ্য প্রয়াস।

তথাপি জাতিসংঘে তার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিটি ঘটে ১৯৭৭ সালে এবং সেটির পটভূমিতে রয়েছে বিংশ শতাব্দীর উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ জুড়ে সংঘটিত শ্রম আন্দোলন, অর্থাৎ ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক সিটিতে আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক পার্টি আয়োজিত নারী দিবস এবং পরবর্তীতে জার্মান প্রতিনিধি ক্লারা জেটকিন, ক্যাট ডাঙ্কার, পলা থাইড ও অন্যরা মিলে ১৯১০ সালের আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে বার্ষিকভাবে ‘বিশেষ নারী দিবস’ উদযাপনের প্রস্তাব করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯১৭ সালে সোভিয়েত রাশিয়ায় নারীর আর্তিকে গুরুত্ব দিয়ে ৮ মার্চ জাতীয় ছুটি ঘোষিত হয়, যা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও দেশগুলোতে ১৯৬৭ সালে নারীবাদী আন্দোলন হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

এরপর বিশ্বব্যাপি তার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিটি ঘটে, যেখানে প্রতি বছর একটি মূলভাব যুক্ত করা হয়, যেমন ২০২১ সালেরটি হচ্ছে- ‘চ্যালেঞ্জ বেছে নিন।’ অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের চিন্তাশক্তি ও পদক্ষেপের ক্ষেত্রে তারা দিনভর, প্রতিদিন দায়িত্বশীল। সেখানে তাদের আবেদন: ‘আমরা প্রত্যেকে চ্যালেঞ্জ বেছে নিতে পারি এবং লিঙ্গপ্রীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারি। আমরা নারীর অর্জনকে তুলে ধরতে পারি। সম্মিলিতভাবে আমরা বৈষম্যহীন বিশ্ব গড়তে পারি। কারণ, চ্যালেঞ্জ গ্রহণেই পরিবর্তন সম্ভব, তাই সবাই চ্যালেঞ্জটি বেছে নিন।’

কেউ কি জানেন, সার্বভৈৗম নিউজিল্যান্ডে বিশ্বে প্রথম নারীকে ১৮৯৩ সালে ভোটের অধিকার দেয়া হয় এবং ১৯২০ সালে মিশরের ডাক্তারদের সমিতি ঐতিহ্যগত লিঙ্গকর্তনের বিরূপ প্রভাবের বিষয়ে সোচ্চার হন।

এই ঘটনাপ্রবাহ নারীর একান্ত অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রগতিতে কেবলই প্রতীকী প্রতিরূপ। কিন্তু সাফল্যের গন্তব্য ও অর্জনে আরও পথ চলা বাকি!

যেমন উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূলভাব দিয়েছে- ‘নারী নেতৃত্ব: কোভিড-১৯ বিশ্বে সমানাধিকার,’ যেখানে করোনা মহামারিকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মী, পরিচর্যাসেবী, উদ্ভাবক ও সংগঠকরা বিশ্বে বালিকা ও নারী হিসেবেই প্রভাব বিস্তারে বিবেচ্য। তারই উন্মোচন হ্যাসট্যাগে ঘটবে যথাক্রমে #ডব্লিউডি২০২১ এবং #ইন্টারন্যাশনালউইমেন্সডে। একইভাবে অন্টারিও প্রদেশের ১৭৫,০০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ইউনিয়নগুলো আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রিমিয়ার ফোর্ডের কাছে স্বচ্ছ দাবি তুলেছেন: ‘আমাদের সন্মান দিন। আমাদের সুরক্ষা দিন। আমাদের মজুরি দিন,’ যার প্রতিফলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাসট্যাগে দেখা যাবে:  #রেসপেক্টপ্রটেক্টপে

অনুরূপভাবে, এ উপলক্ষে বিবিসি বাংলা রেডিওতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন এক সাক্ষাতকারে তুলে ধরেন, নারীবাদীদের এতো নেতিবাচকভাবে দেখা হয় কেন বাংলাদেশে? তিনি বলেন, নারীবাদকে আসলে নারী-পুরুষসহ সব ধরণের বিষয় থেকে আলাদা করে দেখা হয় এবং নারীবাদকে পুরুষ বিদ্বেষী বলার মধ্য দিয়ে এক ধরণের লেভেল তৈরি করা হয়, যার র মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয় যে, যারা নারীবাদী তারা আসলে পুরুষতান্ত্রিকতার বিপক্ষে নয় বরং পুরুষদেরকে বিপক্ষ হিসেবে দেখে।