পিএসডব্লিউ ফ্রি ট্রেনিং অন্টারিও সরকারের ‘ঐতিহাসিক উদ্যোগ’ বটে মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমএনজি নিউজ, টরন্টো

পশ্চিমা সমাজে সন্মুখসারির কর্মজীবি হিসেবে ‘পিএসডব্লিউ’ বা পার্সোনাল সাপোর্ট ওয়ার্কারদের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তারা একদিকে যেমন পরিচর্যা কেন্দ্র ও হাসপাতালে সঙ্কটপূর্ণ রোগীর সেবায় নিয়োজিত, তেমনি সমাজের অপরাপর পরিচর্যা নিবাস, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়ী ও সরকারি অর্থপুষ্ট দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধাশ্রম বা সেবাশ্রমে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন। পাশাপাশি তারা শুধু সেবার অনন্য দৃষ্টান্তই স্থাপন করেন না, বরং রোগীদের প্রাত্যহিক সুস্থতার ক্ষেত্রেও তারা আত্মনিবেদিত ও অবিচল। কেননা পার্সোনাল সাপোর্ট ওয়ার্কার এইচকিউ ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে কানাডায় দীর্ঘমেয়াদি পরিচর্যা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের গড় আয়ুস্কাল ৮৭.২ বছর এবং এদের অনেকেই আবার মানসিক প্রতিবন্ধি, যেমন আলজাইমার বা ডিমেনসিয়ায় আক্রান্ত। ফলে তাদের এই মহান আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়। সেটা এই করোনা মহামারীকালীন কানাডার সর্বত্র, এমনকী অপরাপর দেশেও দৃশ্যমান।

সম্ভবত সে কারনে এই চাহিদামুখী পেশায় কর্মসংস্থানের বিষয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কানাডা সরকারের ‘এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট’ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৪ হাজার সাপোর্ট ওয়ার্কার ইন্টার্ন ও সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান খাতে ১ বিলিয়ন ডলারের ‘সেফ লং-টার্ম কেয়ার ফান্ড’ গঠন করেছে; যাকে কর্মসংস্থান, জনশক্তি উন্নয়ন ও প্রতিবন্ধি বিষয়ক মন্ত্রী কার্লা কোয়াল্টরোহ ‘ক্লিয়ার ক্যারিয়ার পাথ’ বা স্বচ্ছ পেশার পথ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অন্টারিও প্রিমিয়ার দপ্তরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, ৮ হাজার ২০০ নতুন পিএসডব্লিউ তৈরির ক্ষেত্রে ২৪টি সরকারি অর্থপুষ্ট কলেজে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ১১৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যাকে সরকার স্বয়ং ‘অন্টারিও ইনভেস্টস ইন হিস্টোরিক ক্যাম্পেইন টু অ্যাক্সিলারেট ট্রেনিং ফর পার্সোনাল সাপোর্ট ওয়াকার্স’ বলে অভিহিত করেছে। সেটা প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদ্বয় যথাক্রমে ড. মেরিলি ফুলারটন ও রস রোমানোর বক্তব্যেও প্রকাশ পেয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে এতে প্রিমিয়ারের ভাষ্যটি ছিল, ‘আমরা আমাদের সবচেয়ে আক্রম্য বাসিন্দাদের জন্য যেখানে যে সেবাটি প্রয়োজনীয়, তা প্রদানে ঐতিহাসিক পদক্ষেপটি নিয়েছি।’

তদুপরি এক্ষেত্রে শ্রম, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টে ম্যাকনওটনের বক্তব্যটিও স্মরণযোগ্য। তার কথা, ‘এই উৎসাহব্যঞ্জক কার্যক্রমটি বেকার ও সংগ্রামমুখরদের জন্য বাস্তবিকই পরিবর্তন এনে দেবে। এটা আমাদের সবচেয়ে আক্রম্যদের সহযোগিতা ও পরিচর্যায় ৮ হাজারেরও বেশি নতুন প্রশিক্ষিত কর্মজীবির জন্য অর্থবহ ও পারিতোষিক হবে, যারা সহায়তার হাতটি খুঁজেছেন।’

এই কথাগুলো প্রকৃত অর্থে যে কেউ বিবেচনায় নিলে নিঃসন্দেহে বলবেন, এতে বাস্তবিকই এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেকার ও সংগ্রামমুখর অভিবাসী মানুষ তাদের ভবিষ্যতের জন্য এক আলোকিত পেশায় নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন, যা তার পরিবার পরিজনের জন্য তো বটেই, এমনকী নিজ সমাজের জন্য গর্বের অনুষঙ্গ হবে। নিশ্চয়ই আগ্রহীরা দ্রুত এই উদ্যোগটিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন, কেননা সুযোগটি কেবল ৮ হাজার ২০০ জন প্রার্থীর জন্য সীমিত। তারা ভর্তির ছয় মাসের মাঝে পরিপূর্ণভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে উঠবেন এবং সেজন্য আগামী মাসের শুরুতেই আবেদনটি করতে হবে।