রিজেন্ট পার্কে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনে আদিবাসী ২১৫ শিশু ও নিহত মুসলিম পরিবারকে স্মরণ মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমএনজি নিউজ

টরন্টো, জুন ১০: গত রাতে রিজেন্ট পার্কে তিন শতাধিক মানুষ মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে কানাডার সাবেক আবাসিক স্কুলে দুই শতাধিক আদিবাসী শিশুর প্রাপ্ত দেহাবশেষ ও লন্ডনে রোববার পুলিশের ভাষায় ঘৃণ্য অভিপ্রায়ে ট্রাক চাপায় নিহত মুসলিম পরিবারকে স্মরণ করেছে। সেজন্য বক্তারা সেখানে ইসলামোফোবিয়াসহ মুসলিম বিরোধী ঘৃণা এবং মানুষে মানুষে বিদ্যমান ভেদাভেদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

যদিও ওই মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে পরিবার হারানোর শোকেরই মাতম ঘটেছে, তবু সেখানে কানাডায় মুসলমানরা কতোটা নিরাপত্তাহীন সেটাই মুখ্য প্রতিপাদ্য হয়েছে।

ওই শোকবিহ্বল আয়োজনে নানা জাতিগোষ্ঠির মানুষ যোগ দিয়েছেন এবং বিশেষ করে অমুসলিম জনগোষ্ঠির কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে: ‘আমরা লন্ডনের পরিবারভুক্ত’ এবং ‘বৈচিত্র্যতা আমাদের প্রানশক্তি।’

এতে সকল স্তরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝে সবিশেষভাবে যোগ দেন কানাডার পরিবার, শিশু ও সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রী আহমেদ হোসেন। সেখানে হোসেন বলেন, নিজ কমিউনিটিতে হাটতে বেরিয়ে একটি পরিবারের তিন প্রজন্মের মর্মন্তুদ আত্মাহুতি নির্বাক করার মতো ঘটনা। তিনি আরও বলেন, কানাডার জনগণ পরস্পরের প্রতি খেয়াল রাখায় অঙ্গীকারাবদ্ধ, কিন্তু মুসলিম কমিউনিটির ক্ষেত্রে বারংবার তার ব্যত্যয় ঘটেছে, সেজন্য এখন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এসেছে।

পূর্বাহ্নে স্থানীয় টরন্টো সিটি কাউন্সিলর ক্রিস্টিন ওং-ট্যাম তার টুইটার পোস্টে লিখেন, ‘আজ রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হারানো মুসলিম পরিবার ও #২১৫শিশুস্মরণে রিজেন্ট পার্কে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের স্মরণসভা। শোকে ও স্মরণে এবং কথা ও কাজে। #আমাদেরলন্ডনপরিবার।’ তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তেমন বার্তারই অনুরণন ঘটে।

পাশাপাশি স্থানীয় প্রাদেশিক সংসদ সদস্য সুজি মরিসনের বক্তব্যটি ছিল আবেগঘন ও বেশ চিন্তাপ্রসূত। তাতে তিনি বলেন, ‘আমরা আর কোনো ভাবনা বা প্রার্থনা করতে পারছি না। আমরা বলতে পারছি না আমাদের সমাজে ঘৃণা বলতে কিছু নেই; অবশ্যই ঘৃনা আমাদের সমাজে স্থান করে নিয়েছে এবং তার শেকড় গভীরে প্রোথিত। অর্থাৎ তার স্থানটি সুনিশ্চিত। তার বীজ বপন হয়েছে এবং উদগীরণটিও ঠিকই ঘটেছে। তাহলে এই বর্ণবৈষম্য ও ঘৃণার উৎপাটন কী করে সম্ভব? এটা রাতারাতি ঘটেনি। এটা নীতিমালা প্রণয়নেই ঘটেছে। যখন আবাসিক স্কুলের ধারণাটি বাস্তবায়িত হয়, সেটা ছিল নীতিমালার সিদ্ধান্ত, যা একজন করেছে, একটি সংঘবদ্ধ দল করেছে। সেই সংঘবদ্ধ দলের মানুষ বলেছে, আমরা শিশুদের মাঝে কোনো ইন্ডিয়ান শিশুকে রাখবো না, আবাসিক স্কুল সেই ঘৃণা ও বর্ণবৈষম্যের বীজটি বপন করেছে, যার উদগীরণ সমাজে ঘটেই চলেছে। যখন ক্যুইবেক সংসদে প্রস্তাব পাশ হয়, তখন মুসলিম বোনদের হিজাবের উপর আঘাত হেনেছে। তখনই আমাদের সমাজে ঘৃণা ও বর্ণষৈম্যের বীজটি বপন হয়েছে , যা কেবলই বিস্তৃত হচ্ছে।’

অন্যদের মাঝে সেখানে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ফেডারেল সংসদ সদস্য মার্সি ইয়েন, স্কারবরো-গিল্ডউডের প্রাদেশিক সংসদ সদস্য মিটজি হান্টার এবং স্থানীয় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মাঝে খুররম আফতাব, সুরাইয়া ইব্রাহিম ও মকসুদ হোসাইনি প্রমুখ। আর অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল রিজেন্ট পার্ক মাদার্স অব পিস বা শান্তির মাতৃত্ব।