মায়ের প্রতি একজন খ্যাতিমান অভিনেত্রীর ভালোবাসা

টরন্টো, মে ৯: আজকের মা দিবসে কানাডায় অনেকেই তাদের মা এবং মা-তুল্য ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন। এতে সন্দেহাতীতভাবে সৎ মা, শাশুড়ি ও অভিভাবক, যেমন দত্তক মা ও বন্ধুতুল্য পরিবার সদস্যরাও যুক্ত হবেন। সেজন্য এ সময়টায় যারা শত প্রতিকূলতায় চ্যালেঞ্জ নিয়েই লালন-পালনের দায়িত্বটি অব্যাহত রেখেছন, তাদের প্রতি মানুষ বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাবেন।

তেমনিভাবে করোনা মহামারিতে গত বছর নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় হলিউডের অস্কারজয়ী অভিনেত্রী ও পরিচালক অ্যাঞ্জেলিনা জোলির একটি উপ-সম্পাদকীয় ছাপা হয়। তাতে তিনি একক অভিভাবক হিসেবে মায়ের প্রগাঢ় মমত্ব বোঝাতে গিয়ে লিখেন, ‘যখন আমার বাবা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন, তখন আমার [মা]র জীবনটাই পাল্টে যায়। তার স্বপ্নের সংসারে অগ্নিদাহের সৃষ্টি হয়। তবু তিনি মায়ের মমতায় অবিচল থাকেন।’

জোলি তার সাবেক স্বামী ব্র্যাড পিটের গর্ভজাত ছয় সন্তানের জননী। ওই লেখায় মা মার্সেলিন বার্ট্রান্ডের সপ্রান ভালবাসাই ‘পুর্নাবিস্কৃত’ হয়েছে। কারণ তিনি মা বাট্রান্ডের কাছেই লালিত হন। তাই একক অভিভাবক হিসেবে মায়ের ¯েœহাশীষপূর্ণ প্রেরণাই নিজের মাঝে প্রজ্জ্বলিত করেছেন।

জোলি স্মৃতি রোমন্থনে দেখিয়েছেন, কী করে তার মা ‘ভালবাসার সজীবতায়’ রক সঙ্গীতে পুরো ঘরময় পরিপূর্ণ করে রাখতেন, যখন তার ১৯৭৬ সালে জন ভোয়িটের সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। জোলির ভাষায়, “মা মারা গেলে আমি ডান হাতে একটা ছোট্ট ট্যাটু করিয়েছিলাম। জানতাম, সময়ের অবগাহনে তা বিস্মৃত হয়।’ সবার কাছে মনে হত ‘এম’ লিখেছি। কিন্তু সেটা আমার মা মার্সেলিনের নামের ‘এম’ নয়। এটা ছিল ‘উইন্টার’-এর ‘ডব্লিউ’; রোলিং স্টোনসের একটা গান, যা মা ছোট বয়সে গেয়ে শোনাতেন, সেটা আমার শৈশবের প্রিয় স্মৃতি।”

জোলি তার নতুন অনুভূতিটাই লেখাটিতে তুলে ধরেছেন। তাতে লিখেছেন, ‘এখন যখন ওই ‘উইন্টার’ গানটা শুনি, উপলব্ধি করি মা কতোটা অসহায়ত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন, আবার কতোটা অদম্য সাহসে তার সন্তানদের আগলে রেখেছেন।’ একই সঙ্গে এটাও প্রতিভাত পিটের সঙ্গে তার ১২ বছরের সম্পর্কচ্যুতি। ‘জীবনটা অনেকভাবে গড়িয়েছে। আমি দেখেছি আমার জীবনের পরাজয় এবং নিজের জীবনধারায় ঘটে যাওয়া পরিবর্তন। আমার কল্পনাতীত পীড়নকে তা তুলে ধরে।’ আরও বিস্তৃত করে লিখেন, ‘কিন্তু এখন যখন আমার মেয়েরা সময়ের অবগাহনে বড় হয়েছে, সেটা আমি মেয়ে হিসেবে উপলব্ধি করি। আমি আমার মাকে ও তার প্রেরণাকে পুর্নাবিস্কার করি…তিনি সেই নারী যিনি পরাজয়েও ভালবেসে গেছেন, এবং কখনোই তার ভালবাসা ও হাসি ম্লান হয়নি।’

জোলি সেখানেই বাট্রান্ডের সঙ্গে নিজেকে পুর্নাবিস্কার করেছেন, যিনি একাধারে আট বছর স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ২০০৭ সালে মারা যান। আর তাই মায়ের মতোই জোলি তার সাহসিকতায় নিজ সন্তানদেরও আগলে রেখেছেন।      

তার ভাষ্য, ‘এখন আমি বুঝি একাকী হওয়াটা কতোটা যাতনার এবং নিজের শীতের কোটে ভালবাসার মানুকে জড়িয়ে রাখাটা। পাশাপাশি বিপুলভাবে কৃতজ্ঞতায় এটাও বুঝি তাদের নিরাপদ ও উষ্ণ রাখাটা। যখন সন্তানরা আপনাদের জীবনে আসবে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে এবং সর্বাগ্রেই বিবেচিত হয়ে থাকে।’ সম্ভবত সকল মমতাময়ী মা তেমনটাই মমতায় আগলে রাখেন প্রতিটি সন্তানকে, সেই মায়েদের মা দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি!