কানাডায় ভেরিয়্যান্টের বিস্তার এবং ‘দ্বৈত রূপান্তর’-এর ঝুঁকি

মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমএনজি নিউজ

টরন্টো, এপ্রিল ১১: এ পর্যন্ত কানাডার সর্বত্র সম্ভাব্য প্রাণঘাতী ভেরিয়্যান্টের বিস্তার ঘটেছে, যার ৯০ শতাংশের বেশি যুক্তরাজ্যে চিহ্নিত বি১১৭ বিশিষ্ট। অনুরূপভাবে ব্রাজিলে আবিস্কৃত পি১ বিশিষ্ট ভেরিয়্যান্টের বিস্তারও কানাডায় ঊর্ধ্বমুখী, যা গত কয়েক সপ্তাহে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, অন্টারিও ও আলবার্টা প্রদেশে দ্বিগুণ হয়ে সংখ্যায় ১,০০০ দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রাপ্ত বি১৩৫১ বিশিষ্ট ভেরিয়্যান্টটি সংখ্যাগত দিক থেকে ক্যুইবেকে ১৫০, ৭০ ততোর্ধ্ব অন্টারিওতে এবং ৫০-এর অধিক ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় বিস্তৃত। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কানাডায় ধীর প্রয়াসে অগ্রসরমান টিকাদান কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে তৃতীয় ঢেউয়ে গাণিতিক নিয়মে ভেরিয়্যান্টের প্রসার ঊর্ধ্বমুখী এবং পরিপূর্ণ বিধিবিধান তোয়াক্কার ফলে বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত তরুণদের মাঝে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু সংখ্যা উভয়টাই বেড়েছে।

এ কারণে কানাডায় উদ্ভূত জীবাণু গবেষণা দলের চেয়ার এবং ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রমণ রসায়নশাস্ত্রের সহকারি অধ্যাপক জেসন কিন্ড্রাচাক বলেছেন, ‘দেশব্যাপি অনেক জীবাণুই ছড়িয়ে পড়ছে, যা অতি দ্রুত উর্ধ্বমুখী হচ্ছে। যদিও টিকাদান শুরু হয়েছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যে পর্যায়ে থাকটা দরকার ছিল, তার ধারে কাছেও পৌঁছেনি।’

সেজন্য বিশ্বের গবেষণার বৃহৎ প্রেক্ষাপটে, কানাডায় বিস্তৃত তিনটি উল্লেখযোগ্য ভেরিয়্যান্টের আত্মপ্রকাশ একই সঙ্গে ঘটেছে এবং তা প্রায় বলতে গেলে গত মার্চ মাসে ভারতে সংগৃহীত নমুনা থেকে চিহ্নিত করোনা জীবাণুর অজানা ‘দ্বৈত রূপান্তর’ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে পৌঁছে গেছে। সৌভাগ্যক্রমে এই ব্যাপকমাত্রার রূপান্তরটি ধারাবাহিকতা বর্হিভূত এবং তা জীবাণু যেভাবে আচরণ করে তেমন পন্থায় ঘটেনি। তথাপি কিছু রূপান্তর ‘প্রোটিন স্পাইক’ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে, যা সচরাচর মানবকোষে অনুপ্র্রবেশের ক্ষেত্রে অবলম্বন হিসেবে কাজ করে থাকে এবং এই ভেরিয়্যান্টগুলো যথেষ্ট সংক্রামক এবং তা রোগ জটিলতা বৃদ্ধিতে অথবা টিকার প্রতিরোধ এড়াতে সক্ষম।

ভারতীয় সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ, জেনোম বিজ্ঞানীরা করোনা জীবাণুর এই ‘দ্বৈত রূপান্তর’ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই সরকার থেকে বলা হয়েছে, পশ্চিম মহারাষ্ট্র রাজ্যে সংগৃহীত নমুনায় দৃশ্যমান যে ‘গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় ই৪৮৪কিউ ও এল৪৫২আর সমৃদ্ধ রূপান্তরে তার আনুপাতিক বৃদ্ধিটি ঘটেছে। তাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ‘তেমন [দ্বৈত] রূপান্তর অনাক্রম্যতাটি এড়িয়েছে, এমনকী যথেষ্টমাত্রায় অকার্যকর হয়েছে।’

ফলে এই ভেরিয়্যান্টের কারণে আমরা এখন কতোটা শংকিত? বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, ‘স্পাইক জিন’-এর ক্ষেত্রে রূপান্তর বংশাণুক্রমিকভাবে ‘উত্তম’ পন্থায় মানুষকে আক্রান্ত করে থাকে অথবা অ্যান্টিবডি বা প্রতিরোধ প্রশমনে সহায়ক হয়। সেজন্য শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সার্স-কোভ২ বিশিষ্ট রসায়ন, যা কোভিড-১৯ সংক্রামক জীবাণু অর্থাৎ আমাদের দেহে প্রতিরোধ সক্ষমতা সৃষ্টিতে সহায়ক টিকাটি আবশ্যক। এতে ‘প্রতিরোধ প্রশমনে সহায়ক’ টিকাটিই হচ্ছে সেরা, কেননা তা মানবদেহে কোষে অনুপ্রবেশে প্রতিরোধব্যুহ গড়ে তোলে।