বাংলাদেশের কিংবদন্তী নায়িকা কবরীর প্রয়াণ

টরন্টো, এপ্রিল ১৭: জীবনমৃত্যুর সংকটে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশের প্রখ্যাত নায়িকা সারাহ বেগম কবরী আজ স্থানীয় সময় ১২:২০ মিনিটে রাজধানী ঢাকার শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর এবং তাকে সেদিন সন্ধ্যায় বনানী গোরস্থানে সন্মানপূর্ণ গার্ড অব অনার প্রদর্শনে দাফন করা হয়েছে।

তার মৃত্যুতে দেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়ে গণমাধ্যমে বার্তা পাঠান। তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলের রাজনীতিক হিসেবে নারায়নগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই মেয়াদের দায়িত্ব পালন করেন।

প্রায় ১৩ দিন আগে এই জাতীয় পুরস্কার জয়ী প্রথিতযশা শিল্পী কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হন। প্রথমে তাকে চিকিৎসা প্রদানে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যায় স্থানান্তরিত হন।

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশ চট্টগ্রামে মিনা পাল নামে জন্মগ্রহণকারী গুণী কবরী মাত্র ১৩ বছর বয়সে চিত্রপরিচালক সুভাষ দত্তের ‘শতরঙ’ ছায়াছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম চলচ্চিত্রে পা রাখেন।

এরপর সত্তর ও আশির দশক জুড়ে তিনি বহু ছায়াছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন, তন্মধ্যে নায়ক ফারুক অভিনীত ‘সুজন সখী’ ও ‘সারেং বউ’ অন্যতম। সত্তর দশকে নায়ক রাজ রাজ্জাকের সঙ্গে অভিনয় করে ঘরে ঘরে পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও নায়ক বুলবুল আহমেদের সঙ্গে ‘দেবদাস’ ছায়াছবিতে অভিনয় করে সবিশেষ প্রশংসা অর্জন করেন।

অন্যদিকে ভারতীয় পরিচালক ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছায়াছবিতে অভিনয় করে যথেষ্ট প্রশংসার অধিকারীনি হন এবং জহির রায়হান পরিচালিত উর্দু ছায়াছবি ‘বাহানা’ একই মাত্রায় তার পরিচিতিকে সুবিদিত করে তোলে।

একই সঙ্গে অসংখ্য ছায়াছবির মাঝে তার অভিনীত ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘অরুন বরণ কিরণ মালা’ ও ‘লালন ফকির’ উল্লেখযোগ্য।

এই কিংবদন্তীতুল্য কবরী অভিনয় জগতে যাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন, তারা হচ্ছেন- রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রানা, উজ্জ্বল, ওয়াসীম, খান আতাউর রহমান, গোলাম মোস্তাফা, আনোয়ার হোসেন ও এ টি এম শামসুজ্জামান।

তিনি ‘স্মৃতিটুকু থাক’ নামে একটি গ্রন্থও রচনা করে গেছেন। পাশাপাশি নারীর দুঃখবেদনা সংবলিত তার পরিচালিত ‘আয়না’ ছায়াছবিতে কাকতালীয়ভাবে ৪০ বছর পর তার প্রথম পরিচালকও অভিনয় করেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণের পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রক্তদান করেন। সে কারণে জীবন ঝুঁকির মাঝে পালিয়ে প্রতিবেশী ভারতে শরণার্থী হন। সেখানে তিনি বহু প্রতিষ্ঠিত লেখক ও পরিচালকের সান্নিধ্য লাভ করেন, এমনকী মুম্বাইয়ে নির্মিত ‘জয় বাংলাদেশ’ ছায়াছবিতে অভিনয় করেন। মৃত্যুকালে তিনি পাঁচ পুত্র সন্তান রেখে গেছেন।